SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or

Log in with Google Account

অষ্টম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা - NCTB BOOK

আল্লাহ তায়ালার দাসত্ব ও আনুগত্য স্বীকার করে তাঁর আদেশ পালন ও নিষেধ বর্জন করে জীবন পরিচালনাকে ইসলামি পরিভাষায় ইবাদত বলে। ইসলাম হলো পরিপূর্ণ জীবন বিধান। ইসলামের মৌলিক পাঁচটি বিষয় যথা : কালিমা, নামায, রোযা, যাকাত ও হজ যথাযথ পালনের নাম ইবাদত । আবার মানব- জীবনের প্রতিটি কাজ ইসলামি বিধি-বিধান অনুযায়ী সম্পন্ন করাও ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত। পৃথিবীর সকল সৃষ্টবস্তু মানুষের কল্যাণের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে । আর মানুষ ও জিন জাতিকে শুধু আল্লাহর ইবাদতের জন্যই সৃষ্টি করা হয়েছে।

এ অধ্যায় শেষে আমরা-
■যাকাতের ধারণা, যাকাত ফরজ হওয়ার শর্ত ও যাকাতের মাসারিফ বর্ণনা করতে পারব।
■যাকাতের অর্থনৈতিক ও সামাজিক গুরুত্ব এবং তাৎপর্য বিশ্লেষণ করতে পারব।
■হজের ধারণা, পটভূমি, তাৎপর্য, ফজিলত, ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নাতসমূহ ও নিয়মাবলি বর্ণনা করতে পারব।
■হজ পালনের ত্রুটি এবং তা সংশোধনের উপায় বর্ণনা করতে পারব।
■সাম্য ও বিশ্বভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠায় হজের ভূমিকা ব্যাখ্যা করতে পারব।
■কুরবানির ধারণা, পটভূমি ও নিয়মাবলি বর্ণনা করতে পারব।
■বাস্তব জীবনে ত্যাগ ও উদারতা অর্জনে কুরবানির গুরুত্ব বিশ্লেষণ করতে পারব । আকিকার ধারণা ও আদায়ের নিয়ম বর্ণনা করতে পারব।

Content added || updated By

‘যাকাত’ আরবি শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ বৃদ্ধি, পবিত্রতা, পরিচ্ছন্নতা ইত্যাদি। ইসলামি পরিভাষায় ধনী ব্যক্তিদের নিসাব (নির্ধারিত) পরিমাণ সম্পদ থাকলে নির্দিষ্ট অংশ গরিব ও অভাবী লোকদের মধ্যে বিতরণ করে দেওয়াকে যাকাত বলে।

যাকাত প্রদানের মাধ্যমে সম্পদ ব্যক্তিবিশেষের হাতে পুঞ্জীভূত থাকে না। আর মানুষের হাতে সম্পদ পুঞ্জীভূত থাকুক আল্লাহ তায়ালা তা পছন্দ করেন না । তিনি চান সম্পদ মানুষের কল্যাণে ব্যয় হোক, সমাজের সামগ্রিক অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি হোক । এ বিবেচনায় যাকাত অর্থ বৃদ্ধি । যাকাত প্রদানে দাতার অন্তর কৃপণতার কলুষ থেকে পবিত্র হয়। বিত্তশালীদের সম্পদে দরিদ্রের অধিকার আছে । কাজেই গরিবের নির্ধারিত অংশ দিয়ে দিলে অবশিষ্ট সম্পদ ধনীদের জন্য পবিত্র হয়ে যায়। এদিক বিবেচনায় যাকাত অর্থ পবিত্রতা। যাকাত দিলে সম্পদে আল্লাহ বরকত দান করেন।

ইসলামের পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ রুকনের মধ্যে যাকাত অন্যতম । কুরআন মজিদের বহু জায়গায় সালাতের সাথে যাকাত আদায়ের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে । আল্লাহ তায়ালা বলেন: 

অর্থ : “আর তোমরা নামায কায়েম কর এবং যাকাত প্রদান কর ।” (সূরা আল-মুয্যাম্মিল, আয়াত ২০)

যাকাত হলো দরিদ্রের আল্লাহ প্রদত্ত অধিকার । ধনীদের দয়া বা অনুগ্রহ নয় । বরং এটি আদায় করা ধনীদের উপর ফরজ। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা বলেন:

অর্থ : “তাদের (ধনীদের) ধন-সম্পদে অবশ্যই দরিদ্র ও বঞ্চিতদের অধিকার রয়েছে ।” (সূরা আয্-যারিয়াত, আয়াত ১৯)

শরিয়তের বিধান অনুযায়ী নামায আদায় করলে, আদায়কারীর জন্য যেমন পুরস্কারের ঘোষণা আছে, তেমনি যাকাত (ফরজ হলে) আদায়কারীর জন্যও সুসংবাদ রয়েছে । যেমন, যাকাত দিলে মাল পবিত্র হয় এবং সম্পদে আল্লাহ তায়ালা বরকত দেন। যাকাত প্রদানকারীদের আখিরাতে অধিক পরিমাণ পুরস্কার দেওয়া হবে যা মানুষ কল্পনাও করতে পারবে না। হাদিসে কুদসিতে আছে, “আল্লাহ তায়ালা তাঁর বান্দাকে বলেন, হে বনি আদম! আমার পথে খরচ করতে থাক। আমি আমার অফুরন্ত ভাণ্ডার থেকে তোমাদের দিতে থাকব” (বুখারি ও মুসলিম)।

যাকাত আদায়কারীদের সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন :

অর্থ : “আর আল্লাহ বলেন, আমি অবশ্যই তোমাদের সাথে আছি, যদি তোমরা নামায কায়েম কর এবং যাকাত দাও।” (সূরা আল-মায়িদা, আয়াত ১২)

যাকাত দানকারীর পুরস্কার ও কৃপণ ব্যক্তির দুঃসংবাদ সম্পর্কে অন্য এক হাদিসে আছে, “দানশীল ব্যক্তি আল্লাহর নিকটবর্তী, জান্নাতের নিকটবর্তী, আল্লাহর বান্দাদের নিকটবর্তী এবং জাহান্নাম থেকে দূরবর্তী । অপরদিকে কৃপণ আল্লাহ থেকে দূরে, আল্লাহর বান্দাদের থেকে দূরে এবং জাহান্নামের নিকটে। একজন জাহিল দানশীল একজন কৃপণ আবিদ অপেক্ষা আল্লাহর কাছে অনেক বেশি পছন্দনীয়।” (তিরমিযি)

কেউ যদি সম্পদ জমা করে রাখে দরিদ্র ও বঞ্চিতদের প্রাপ্য যথাযথভাবে আদায় না করে, তাহলে কিয়ামতের দিন তাকে কঠোর শাস্তি ভোগ করতে হবে। এ সম্পর্কে কুরআন মজিদে বলা হয়েছে: আর যারা সোনা রূপা জমা করে রাখে এবং তা আল্লাহর পথে খরচ করে না, তাদেরকে কষ্টদায়ক শাস্তির সংবাদ দাও । সেদিন জাহান্নামের আগুনে তা উত্তপ্ত করা হবে এবং তা দিয়ে কপালে, পাঁজরে এবং পিঠে দাগ দেওয়া হবে, সেদিন বলা হবে এ তো সে সম্পদ, যা তোমরা নিজেদের জন্য জমা করে রেখেছিলে । এখন সে সঞ্চিত সম্পদের স্বাদ গ্রহণ কর । (সূরা আত্তাওবা: ৩৪-৩৫)

যাকাত ফরজ হওয়া সত্ত্বেও যারা তা আদায় করে না এবং যাকাত দিতে অস্বীকার করে, তাদের ব্যাপারে ইসলামি বিধান হচ্ছে, পার্থিব জীবনে তারা কৃপণ হিসেবে আখ্যায়িত হবে এবং পরকালে কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হবে । আল্লাহ তায়ালা বলেন : “আর ধ্বংস ঐসব মুশরিকের জন্য, যারা যাকাত দেয় না ও আখিরাতকে অস্বীকার করে ।” (সূরা হা-মীম-আস্-সাজদাহ : ৬-৭)

ইসলামের প্রথম খলিফা হযরত আবু বকর (রা.)-এর শাসনামলে কিছু লোক যাকাত দিতে অস্বীকার করল। খলিফা তাদের ইসলাম থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সমতুল্য মনে করলেন। তিনি ঘোষণা করলেন, মহানবি (স.)-এর যুগে যারা যাকাত দিত, তাদের মধ্যে কেউ যদি একটি ছাগলের বাচ্চা দিতেও অস্বীকার করে তবে তার বিরুদ্ধে আমি জিহাদ করব । হযরত আবু বকর (রা.)-এর বক্তব্যের যৌক্তিকতার সাথে নিম্নবর্ণিত হাদিসের বক্তব্যের মিল পাওয়া যায়। হাদিসে আছে, “আল্লাহর কসম, যারা নামায ও যাকাতের মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টি করে তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই লড়াই করব।” (বুখারি)

প্রত্যেক মুমিন বান্দার উচিত পরকালের কঠিন শাস্তি থেকে মুক্তি ও আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায় যথানিয়মে যাকাত আদায় করা। অন্যকে যাকাত দানে উৎসাহিত করা। ইসলামি বিধানমতো যাকাত আদায় করে সমাজের অসহায় দরিদ্রের অবস্থার উন্নতি করা।

কাজ : শিক্ষার্থীরা দলে বিভক্ত হয়ে যাকাত প্রদানের সুফল সম্পর্কে আলোচনা করবে।
Content added || updated By

যাকাত ফরজ হওয়ার শর্ত সাতটি । শর্তগুলোর বিবরণ নিচে দেওয়া হলো : 

১. মুসলমান হওয়া : যাকাত ফরজ হওয়ার প্রথম শর্ত হলো মুসলমান হওয়া। অমুসলিমদের উপর যাকাত ফরজ নয়। কাজেই কোনো ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণ করলে তাকে তার অতীত জীবনের যাকাত দিতে হবে না । যেদিন মুসলমান হবে সেদিন থেকে হিসাব করে যাকাত দিতে হবে।

২. নিসাবের মালিক হওয়া : যে পরিমাণ সম্পদের মালিক হলে শরিয়তে যাকাত ফরজ হয়, সে পরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়া।

৩. নিসাব পরিমাণ সম্পদ প্রয়োজনের অতিরিক্ত হওয়া : যেসব দ্রব্যের উপর মানুষের জীবনযাপন নির্ভর করে, সেসব জিনিসপত্রকে প্রয়োজনীয় দ্রব্য বলে। যেমন : খাওয়া-দাওয়া, পোশাক-পরিচ্ছদ, বসবাসের বাড়িঘর, পেশাজীবীর যন্ত্রপাতি ইত্যাদি। যানবাহনের নৌকা, সাইকেল, মোটর, পশু, কৃষিকাজের সরঞ্জাম, পড়ালেখার সরঞ্জাম এসবও প্রয়োজনীয় জিনিসের অন্তর্ভুক্ত। এগুলোর উপর যাকাত ফরজ হবে না।

8. ঋণগ্রস্ত না হওয়া : ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হলেও তার উপর যাকাত ফরজ হবে না। কারণ সে জীবনধারণের মৌলিক প্রয়োজনেই ঋণ গ্রহণ করেছে। তবে ঋণ পরিশোধ করার পর যদি নিসাব পরিমাণ সম্পদ কারো হাতে থাকে তাহলে তাকে যাকাত দিতে হবে।

৫. মাল এক বছরকাল স্থায়ী থাকা : নিসাব পরিমাণ সম্পদ ব্যক্তির হাতে এক বছর কাল স্থায়ী না হলে, তার উপর যাকাত ফরজ হয় না। হাদিসে আছে, “ঐ সম্পদে যাকাত নেই যা পূর্ণ এক বছর মালিকানায় না থাকে।” (ইবনে মাজাহ)

৬. জ্ঞানসম্পন্ন হওয়া : যাকাত ফরজ হওয়ার অন্যতম শর্ত হচ্ছে জ্ঞানসম্পন্ন হওয়া । জ্ঞানবুদ্ধিহীন তথা পাগলের উপর যাকাত ফরজ নয়।

৭. বালেগ হওয়া : যাকাতদাতাকে অবশ্যই বালেগ তথা প্রাপ্তবয়স্ক হতে হবে। শিশু, নাবালেগ যত সম্পদের মালিকই হোক না কেন, বালেগ হওয়ার পূর্বে তার উপর যাকাত ফরজ হয় না।

 

যাকাতের নিসাব 
‘নিসাব' আরবি শব্দ। এর অর্থ নির্ধারিত পরিমাণ। শরিয়তের পরিভাষায় যাকাত ফরজ হওয়ার জন্য সম্পদের নির্ধারিত পরিমাণকে নিসাব বলে। সারাবছর জীবনযাত্রার প্রয়োজনীয় ব্যয় নির্বাহের পর বছর শেষে যার হাতে নিসাব পরিমাণ সম্পদ উদ্বৃত্ত থাকে তাকে বলা হয় সাহিবে নিসাব বা নিসাবের মালিক । আর সাহিবে নিসাবের উপরই যাকাত ফরজ । নিসাবের পরিমাণ হলো, সোনা কমপক্ষে সাড়ে সাত তোলা অথবা রুপা কমপক্ষে সাড়ে বায়ান্ন তোলা অথবা ঐ মূল্যের অর্থ বা সম্পদ। ঐ পরিমাণ সম্পদ কারো নিকট পূর্ণ এক বছরকাল স্থায়ী থাকলে ঐ সোনা, রুপা বা সম্পদের মূল্যের চল্লিশ ভাগের এক ভাগ যাকাত হিসাবে দেওয়া ফরজ। কিন্তু সম্পদ নিসাবের কম থাকলে যাকাত দেওয়া ফরজ নয়। এক বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই সম্পদ নষ্ট হয়ে গেলে যাকাত দিতে হবে না। কারো হাতে যদি বছরের প্রথমে নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকে, বছরের মাঝে কোনো কারণে নিসাব হতে কমে যায় এবং বছর শেষে আবার নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়ে গেলে তাকে যাকাত দিতে হবে।

স্ত্রীলোকের ব্যবহার্য সোনা, রুপার অলংকার জীবনের আবশ্যকীয় মৌলিক বস্তুর অন্তর্ভুক্ত নয়। কাজেই অলংকার নিসাব পরিমাণ হলে তাকে যাকাত দিতে হবে। সোনা, রুপা ব্যতীত অন্য কোনো ধাতু যথা: তামা, কাঁসা, পিতল ইত্যাদি ব্যবহার্য জিনিস হিসাবে থাকলে যাকাত দিতে হবে না। তবে ব্যবসায়ের সামগ্রী হলে যাকাত দিতে হবে। এর জন্য শর্ত হচ্ছে এসব সামগ্রী এক বছরকাল হাতে স্থায়ী থাকা এবং নিসাব পরিমাণ হওয়া।

উৎপন্ন শস্যের যাকাত
ধান, গম, যব, খেজুর ইত্যাদি শস্য সেচ প্রদান ছাড়া বৃষ্টির পানিতে জন্মালে প্রয়োজনের অতিরিক্ত সব ফসলের দশ ভাগের এক ভাগ যাকাত আদায় করতে হবে। একে উশর বলা হয়। আর সেচ ব্যবস্থায় উৎপন্ন ফসলের বিশ ভাগের এক ভাগ যাকাত আদায় করতে হয়।

কাজ : শিক্ষার্থীরা দলে বিভক্ত হয়ে যাকাতের নিসাব সম্পর্কে আলোচনা করবে।
Content added || updated By

মাসারিফ আরবি শব্দ । এর অর্থ ব্যয় করার খাত। শরিয়তের পরিভাষায় ইসলামি বিধান অনুযায়ী যাদেরকে যাকাত দেওয়া যায়, তাদেরকে বলা হয় যাকাতের মাসারিফ । যাকাতের মাসারিফ অর্থাৎ কোন কোন খাতে যাকাতের অর্থ ব্যয় করতে হবে আল্লাহ তায়ালা স্বয়ং তা নির্ধারণ করে দিয়েছেন । কুরআন মজিদে বলা হয়েছে:

“যাকাত তো কেবল নিঃস্ব, অভাবগ্রস্ত ও তৎসংশ্লিষ্ট কর্মচারীদের জন্য, যাদের চিত্ত আকর্ষণ করা হয় তাদের জন্য, দাস মুক্তির জন্য, ঋণ ভারাক্রান্তদের, আল্লাহর পথে ও মুসাফিরদের জন্য, ইহা আল্লাহর বিধান।” (সূরা আত- তাওবা, আয়াত ৬০)

যাকাতের মাসারিফ আটটি :
১. অভাবগ্রস্ত বা ফকির।
২. সম্বলহীন, মিসকিন।
৩. যাকাতের জন্য নিয়োজিত কর্মচারীবৃন্দ।
৪. মন জয় করার উদ্দেশ্যে।
৫. মুক্তিকামী দাস।
৬. ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি।
৭. আল্লাহর পথে অর্থাৎ ইসলামের খিদমতে নিয়োজিত ব্যক্তি।
৮. মুসাফির বা অসহায় প্রবাসী পথিক।

 

নিচে মাসারিফের বিবরণ দেওয়া হলো :
১. অভাবগ্রস্ত বা ফকির : ফকিরকে বাংলায় গরিব বলা হয়। যাদের কিছু না কিছু সম্পদ আছে কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় তা যথেষ্ট নয় । যাদের জীবনধারণের জন্য অপরের সাহায্য-সহযোগিতার উপর নির্ভর করতে হয়, এমন ব্যক্তিকে যাকাত দেওয়া যায়। জীবিকা অর্জনে অক্ষম ব্যক্তি, পঙ্গু, ইয়াতিম শিশু, বিধবা, স্বাস্থ্যহীন, দুর্বল এবং যারা দুর্ঘটনা বা প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার এমন লোকদের সাময়িকভাবে যাকাতের খাত থেকে সাহায্য করা যায়।

২. মিসকিন : যারা নিঃস্ব, নিজের পেটের অন্নও যোগাড় করতে পারে না এবং অভাবগ্রস্ত থাকা সত্ত্বেও সম্মানের ভয়ে কারো দ্বারস্থ হয় না, তাদের মিসকিন বলে। মিসকিন সম্পর্কে হাদিসে আছে, “যে ব্যক্তি তার প্রয়োজন মোতাবেক সম্পদ পায় না, অথচ আত্মসম্মানের ভয়ে সে এমনভাবে চলে যে, তাকে অভাবী বলে বোঝাও যায় না, যাতে লোকেরা তাকে আর্থিক সাহায্য করতে পারে। আর সে সাহায্যের জন্য কারো কাছে হাতও পাতে না, কিছু চায়ও না।” (বুখারি ও মুসলিম)। মিসকিনকে যাকাত দেওয়া যায়।

৩. যাকাতের জন্য নিয়োজিত কর্মচারীবৃন্দ : যারা যাকাত আদায় করে, রক্ষণাবেক্ষণ করে, বণ্টন করে ও হিসাবপত্র রাখে, তাদের যাকাতের জন্য নিযুক্ত কর্মচারী বলে। তারা আর্থিক সঙ্গতিসম্পন্ন হলেও যাকাত থেকে তাদের পারিশ্রমিক দেওয়া যাবে।

৪. মন জয় করার উদ্দেশ্যে : সদ্য মুসলমান হওয়া ব্যক্তির সমস্যা দূরীকরণে এবং ইসলামের উপর অবিচল রাখার উদ্দেশ্যে তাদের যাকাত দেওয়া যাবে। ইসলামি পরিভাষায় তাদের ‘মুআল্লাফাতুলকুলুব' বলা হয়েছে । ইসলামের প্রাথমিক যুগে এ জাতীয় লোককে যাকাত দেওয়ার বিধান ছিল।

৫. মুক্তিকামী দাস : যে দাস তার মনিবের সাথে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ পরিশোধ সাপেক্ষে মুক্তি পাওয়ার চুক্তি করেছে এমন দাসকে মুক্তির মূল্য পরিশোধের জন্য যাকাত প্রদান করা যেতে পারে । বর্তমানে ইসলামে ক্রীতদাস প্রথা চালু নেই বিধায় এ খাতে যাকাতের অর্থ বণ্টন করা হয় না।

৬. ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি : যে নিজের প্রয়োজন মিটিয়ে ঋণ পরিশোধ করতে অক্ষম, তাদের যাকাত দিয়ে ঋণ পরিশোধ করতে সাহায্য করা যায়।

৭. আল্লাহর পথে : এর আরবি পরিভাষা হলো 'ফি সাবিলিল্লাহ'। এটির অন্য অর্থ জিহাদ। ইসলামের প্রচার ও প্রসারে এবং কুফরি ব্যবস্থাকে নির্মূল করে ইসলামি ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার সকল প্রচেষ্টাকেই জিহাদ বলে । যে কোনো খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকার সংগ্রামই এক প্রকার জিহাদ। এরূপ ইসলামের খিদমতে নিয়োজিত ব্যক্তিকে যাকাত থেকে সাহায্য করা যায়।

৮. অসহায় প্রবাসী পথিক : কোনো ব্যক্তি সফরে গিয়ে অসহায় অবস্থায় পড়লে বা যাত্রাপথে আর্থিক সংকটের কারণে বিপদে পড়লে সাময়িকভাবে তাকে যাকাতের অর্থ প্রদান করা যায়।

কাজ : শিক্ষার্থীরা দলে বিভক্ত হয়ে ‘যাকাতের মাসারিফ'-এর সংক্ষিপ্ত পরিচয় পোস্টারে লিখে শ্রেণিতে উপস্থাপন করবে।
Content added || updated By

ইসলামি যাকাত ব্যবস্থা সমাজে প্রচলিত থাকলে, সমাজের দরিদ্র ও অভাবী মানুষের নানাবিধ সমস্যার সমাধান হবে। আবার ধনীরাও তাদের দায়মুক্ত হওয়ার বিশেষ সুযোগ পাবে । কাজেই ইসলামে যাকাতের অনেক গুরুত্ব রয়েছে । নিম্নে যাকাতের কতিপয় গুরুত্ব সম্পর্কে বর্ণনা করা হলো :

১. যাকাতের অর্থনৈতিক গুরুত্ব
যাকাতের অন্যতম গুরুত্ব হলো অর্থনৈতিক ভারসাম্য রক্ষা করা। সমাজের কেউ সম্পদের পাহাড় গড়বে, সুউচ্চ ইমারতে বসবাস করবে, বিলাসবহুল জীবনযাপন করবে, আর কেউ অনাহারে, অর্ধাহারে দিন কাটাবে এমন বিধান ইসলামে নেই । কেউ শিক্ষা, খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান ইত্যাদি মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে পারবে না, আর বাড়ি বাড়ি ঘুরবে, শান্তি ও সাম্যের ধর্ম ইসলাম তা কিছুতেই সমর্থন করে না । কাজেই সকল শ্রেণির নাগরিকের মধ্যে অর্থনৈতিক ভারসাম্য রক্ষার জন্য ইসলাম ধনীদের উপর যাকাত ফরজ করেছে। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, “আল্লাহ তায়ালা লোকের উপর সাদাকা (যাকাত) ফরজ করেছেন । তা নেওয়া হবে ধনীদের থেকে এবং বিলিয়ে দেওয়া হবে দুস্থদের মধ্যে।” (বুখারি ও মুসলিম) সাধারণত মানুষের অর্থের প্রতি লিপ্সা থাকে । যে কৃপণ স্বভাবের হয়, সে নিজের কষ্টে উপার্জিত অর্থ নিঃস্বার্থভাবে কাউকে দিতে চায় না । তাই দয়াময় আল্লাহ তায়ালা সম্পদশালী ব্যক্তিদের মনকে সম্পদের লিপ্সা, লোভ, কৃপণতা, স্বার্থপরতা প্রভৃতি দোষ থেকে মুক্ত ও পবিত্র রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি মানুষের মনকে দয়া-মায়া, স্নেহ, মমতা ও ভালোবাসা ইত্যাদি মানবিক গুণসম্পন্ন করে তোলার জন্য তাদের উপর যাকাত ফরজ করে দিয়েছেন । সম্পদের প্রকৃত মালিক আল্লাহ তায়ালা । মানুষের নিকট তা আমানতস্বরূপ । মানুষ শ্রম ও মেধার দ্বারা সম্পদ অর্জন করবে এবং প্রয়োজন মোতাবেক সম্পদ খরচ করবে। কিন্তু সম্পদ জমা করে রাখা বা কেবল নিজের ভোগবিলাসের জন্য খরচ করা ইসলাম অনুমোদন করে না। কারণ ধনীদের সম্পদে দরিদ্রের অধিকার আছে, তা অবশ্যই আদায় করতে হবে। গরিবের অধিকার আদায় করলে মালিক দায়মুক্ত হবে, সম্পদ পবিত্র হবে; অন্যথায় সম্পদ হালাল হবে না। ইসলামি অর্থনীতিতে পুঁজিবাদ সমর্থন করা হয় না। যাকাত প্রথার মাধ্যমে অর্থনৈতিক ভারসাম্য রক্ষা করা হয়।

হযরত মুহাম্মদ (স.) ও খুলাফায়ে রাশিদিনের যুগে সরকারি ব্যবস্থাপনায় যাকাত আদায় করা হতো। আদায়কৃত মালের বিতরণও সরকারি ব্যবস্থাপনায় হতো। নিসাবের নির্ধারিত পরিমাণ সম্পদের মালিকরা যাকাত দিতে বাধ্য থাকত। অন্যদিকে যারা যাকাত পাওয়ার হকদার (দাবিদার ) তারা সবাই যাকাতের অর্থ পেয়ে উপকৃত হতো। কুরআন ও হাদিসের নির্দেশ মোতাবেক যাকাত আদায় ও বিতরণ করা মুসলমানদের একটি পবিত্র দায়িত্ব । এ ব্যবস্থাপনার উপর মুসলমানদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক কল্যাণ অনেকাংশে নির্ভরশীল। মুসলিম সম্প্রদায় ইসলামি ব্যবস্থাপনায় যাকাত আদায় করলে সমাজে ধনী-দরিদ্রের পার্থক্য কমে আসবে; কেউ বেকার থাকবে না । বরং মুসলিম সমাজের অর্থনৈতিক অবস্থার দ্রুত উন্নতি হবে। অসহায় গরিব মানুষকে অর্থ দিয়ে সাহায্য করা একটি মানবিক দায়িত্ব । যাকাত প্রদানের মাধ্যমে এ মানবিক গুণের বিকাশ ঘটবে।

কাজ : শিক্ষার্থীরা দলে বিভক্ত হয়ে ‘যাকাতের অর্থনৈতিক' গুরুত্বের উপর আলোচনা করবে।

২. যাকাতের সামাজিক গুরুত্ব
যাকাতের মাধ্যমে সমাজে ধনী-দরিদ্রের মধ্যকার বিরাজমান বৈষম্য দূর হয়। তাদের মধ্যে অর্থনৈতিক সমতার ক্ষেত্র প্রস্তুত হয় । আল্লাহর নির্দেশমতো যথাযথভাবে যাকাত প্রদান করলে সমাজের কোনো লোক অন্নহীন, বস্ত্রহীন, গৃহহীন থাকবে না । কেউ না খেয়ে থাকবে না । কেউ বিনা চিকিৎসায় কষ্ট পাবে না ।
সম্পদশালী ব্যক্তিদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় যাকাত ও সাদাকার (দানের) অর্থে অভাবীদের প্রয়োজন মিটিয়েও অনেক জনহিতকর এবং কল্যাণমূলক কাজ করা যায় । বহু দরিদ্র ব্যক্তিকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করে তোলা যায়। স্বাস্থ্যবান দরিদ্র শ্রমিককে তার শ্রমের উপযোগী উপকরণ দেওয়া সম্ভব হয় । দরিদ্রের জন্য সেবামূলক অনেক প্রতিষ্ঠান যেমন ইয়াতিমখানা, দাতব্য চিকিৎসালয় প্রভৃতি স্থাপন করা যায় । এমনিভাবে সম্মিলিত প্রচেষ্টা চালালে এমন এক সময় আসবে যখন যাকাত গ্রহণ করার লোক খুঁজে পাওয়া যাবে না। ইসলামের প্রথম যুগে এমন পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে অপূর্ব সাফল্য অর্জিত হয়েছিল। দৃষ্টান্তস্বরূপ খলিফা হযরত উমর ইবনে আব্দুল আজিজ (র.)-এর যুগের কথা উল্লেখ করা যায়। ইসলামি যাকাত ব্যবস্থা প্রচলনের ফলে, তাঁর যুগে যাকাত নেওয়ার মতো লোক খুঁজে পাওয়া কষ্টকর ছিল । ইসলামি যাকাত ব্যবস্থা গোটা সমাজকে কৃপণতা, সংকীর্ণতা, স্বার্থপরতা, হিংসা, বিদ্বেষ প্রভৃতি বদভ্যাস থেকে পবিত্র রাখে এবং পরস্পরের মধ্যে ভালোবাসা, ত্যাগ, মমত্ববোধ ইত্যাদি গুণ আরও সুদৃঢ় করে।

কাজ : শিক্ষার্থীরা দলে বিভক্ত হয়ে ‘যাকাতের সামাজিক গুরুত্বের' উপর আলোচনা করবে।
Content added || updated By

‘হজ' আরবি শব্দ । এর আভিধানিক অর্থ সংকল্প করা, ইচ্ছা করা ইত্যাদি । ইসলামি পরিভাষায় নির্দিষ্ট দিনসমূহে নির্ধারিত পদ্ধতিতে আল্লাহর নৈকট্য ও সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে পবিত্র কাবাঘর ও সংশ্লিষ্ট স্থানসমূহে বিশেষ কার্যাদি সম্পাদন করাকে হজ বলে । হজ একটি গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক ও শারীরিক ইবাদত । যিলহজ মাসের ৮ থেকে ১২ তারিখ পর্যন্ত মক্কা, মিনা, আরাফা এবং মুয্দালিফায় আল্লাহ্ ও তাঁর রাসুল (স.)-এর নির্দেশ মোতাবেক বিভিন্ন কার্য সম্পাদন করাও হজের অন্তর্ভুক্ত। প্রত্যেক সুস্থ, প্রাপ্তবয়স্ক, বুদ্ধিমান ও সামর্থ্যবান মুসলিম নরনারীর উপর জীবনে একবার হজ আদায় করা ফরজ। এরপর যতবার হজ করবে তা নফল হিসেবে গণ্য হবে এবং অনেক সাওয়াবের অধিকারী হবে। হজ সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন :

“মানুষের মধ্যে যার সেখানে যাওয়ার সামর্থ্য আছে, আল্লাহর উদ্দেশ্যে ঐ গৃহে হজ করা তার অবশ্য কর্তব্য ।” (সূরা আলে-ইমরান, আয়াত ৯৭)

যেসব লোক কাবাঘর পর্যন্ত যাতায়াতের দৈহিক ক্ষমতা রাখে এবং হজ হতে ফিরে আসা অবধি পরিবারবর্গের আবশ্যকীয় ব্যয় বাদে যাতায়াতের খরচ বহন করতে সক্ষম, তাদের উপর হজ ফরজ। মহিলা হাজি হলে একজন সঙ্গী থাকতে হবে। সঙ্গী হবেন স্বামী অথবা এমন আত্মীয় যার সাথে বিবাহ সম্পর্ক হারাম। যেমন: বাবা, ছেলে, ভাই, চাচা, মামা ইত্যাদি। সফরসঙ্গীর ব্যয়ভার মহিলা হাজিকেই বহন করতে হবে।

হজের ঐতিহাসিক পটভূমি
ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে সালাত অন্যতম । সালাত আদায় ও আল্লাহর আনুগত্য প্রকাশের জন্য পৃথিবীতে সর্বপ্রথম মক্কা নগরীতে যে ঘর (ইবাদতখানা) তৈরি হয়, তার নাম ‘বাইতুল্লাহ' বা আল্লাহর ঘর । কালক্রমে এ পবিত্র ঘর জনমানবশূন্য হয়ে পড়ে ।
প্রায় চার হাজার বছর আগের কথা । ইরাকে জন্ম নেওয়া আল্লাহর নবি হযরত ইব্রাহিম (আ.) আল্লাহর আদেশে বিবি হাজেরা ও শিশুপুত্র ইসমাইল (আ.)-কে কাবাঘরের নিকটবর্তী জনমানবশূন্য স্থানে রেখে যান । বিবি হাজেরা স্বামীকে লক্ষ করে বললেন : “আমাদের এমন মরু প্রান্তরে ফেলে রেখে কেন চলে যান?” উত্তরে স্বামী বললেন, “আল্লাহর নির্দেশ ।” বিবি হাজেরা বললেন, “তাহলে আল্লাহর ইচ্ছাই পূর্ণ হোক । তিনি অবশ্যই আমাদের বাঁচিয়ে রাখবেন।” যাওয়ার সময় হযরত ইব্রাহিম (আ.) তাঁদের জন্য দোয়া করলেন।

“হে আমাদের প্রতিপালক! আমি আমার বংশের কতককে বসবাস করালাম অনুর্বর উপত্যকায় তোমার পবিত্র ঘরের নিকট । হে আমাদের প্রতিপালক! এ জন্য যে, তারা যেন সালাত কায়েম করে । অতএব তুমি কিছু লোকের অন্তর তাদের প্রতি অনুরাগী করে দাও এবং ফল ফলাদি দ্বারা তাদের রিযিকের ব্যবস্থা করে দাও যেন তারা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে ।” (সূরা ইব্রাহিম, আয়াত ৩৭)

নবি ইব্রাহিম (আ.)-এর প্রার্থনা আল্লাহ তায়ালা কবুল করলেন।

হযরত ইব্রাহিম (আ.)-এর রেখে যাওয়া সামান্য খাদ্য ও পানীয় কয়েক দিনের মধ্যেই ফুরিয়ে গেল। মা ও শিশু পুত্র ক্ষুধা-পিপাসায় কাতর । মা হাজেরা নিকটস্থ সাফা পাহাড়ে উঠে চারিদিকে তাকিয়ে দেখেন, আবার মারওয়া পাহাড়ের চূড়ায় উঠে চারিদিকে তাকান, কোথাও কোনো কাফেলা দেখা যায় কি না, যাতে তাদের নিকট থেকে সামান্য পানি নিয়ে পিপাসা কাতর পুত্রের মুখে দেওয়া যায় । কিন্তু কোথাও কোনো জনমানবের চিহ্নও দেখা গেল না । এমনিভাবে সাতবার সাফা ও মারওয়া পাহাড়ে দৌড়াদৌড়ি করলেন । তারই নিদর্শনস্বরূপ হাজিগণ ঐ স্থানে (সাঈ) দ্রুত হাঁটেন। মা হাজেরা কোথাও পানির সন্ধান না পেয়ে শিশুর কাছে ফিরে এসে বিস্ময়ে দেখলেন, নিকটেই মাটি ফুঁড়ে স্বচ্ছ পানির ফোয়ারা বইছে । এ পানির ফোয়ারাই ছিল বিখ্যাত যমযম কূপের উৎস । বিবি হাজেরা শিশু ইসমাইলকে পানি পান করিয়ে তার তৃষ্ণা নিবারণ করলেন । নিজেও তৃপ্তিসহকারে পানি পান করে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করলেন । মরুভূমিতে যেখানে পানি থাকে সেখানে আকাশে পাখি ওড়ে। দূর হতে তা দেখে কাফেলা এসে জমা হয়। জুর্হুম বংশের এক বাণিজ্য কাফেলা এসে মা হাজেরার অনুমতি নিয়ে সেখানে বসবাস শুরু করল। ক্রমে আরও লোকজন এসে জড়ো হলো। সকলের বিশ্বাস, এ পুণ্যাত্মা মা ও শিশুর কল্যাণেই আল্লাহ তায়ালা এ ঊষর মরুর বুক চিরে পানির ঝর্ণা প্রবাহিত করেছেন। ধীরে ধীরে মক্কা একটি জনপদে পরিণত হলো।

হযরত ইসমাইল যখন কিশোর বয়সে উপনীত হলেন তখন ইব্রাহিম (আ.) একটি অগ্নিপরীক্ষার সম্মুখীন হলেন। পুত্র ইসমাইলকে কুরবানি করার জন্য আল্লাহ তায়ালা তাঁকে আদেশ করলেন। আল্লাহ্ তায়ালাকে খুশি করার জন্য হযরত ইব্রাহিম (আ.) আপন পুত্রকে কুরবানি করতে প্রস্তুত হয়ে এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেন । তারপর আল্লাহ্ তায়ালা ইব্রাহিম (আ)-কে কাবাঘরের স্থানটি দেখিয়ে তা পুনঃনির্মাণের আদেশ দিলেন । ইব্রাহিম (আ.) পুত্র ইসমাইলকে সাথে নিয়ে পবিত্র কাবাঘর পুনঃনির্মাণ করেন। তারপর এ দোয়া করেন :

অর্থ : “হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের এ কাজ কবুল করুন । নিশ্চয়ই আপনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞাত।” (সূরা আল-বাকারা, আয়াত ১২৭)

এরপর আল্লাহ্ তায়ালার নির্দেশে হযরত ইব্রাহিম (আ.) মানুষকে হজের জন্য আহবান করেন । পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে :

অর্থ : “এবং আপনি মানুষের নিকট হজের ঘোষণা করে দিন, তারা আপনার নিকট আসবে পদব্রজে ও সর্বপ্রকার ক্ষীণকায় উষ্ট্রের পিঠে, তারা আসবে দূর-দূরান্তের পথ অতিক্রম করে ।” (সূরা আল-হাজ্জ, আয়াত ২৭)

হযরত ইব্রাহিম (আ.)-এর আহ্বানে কাবা শরিফ আবার তাওহিদপন্থীদের পুণ্যভূমিতে পরিণত হলো। হযরত ইব্রাহিম (আ.) চলে গেলেন আপন কর্মক্ষেত্রে। আর হযরত ইসমাইল (আ.) রয়ে গেলেন মক্কায় ৷ পরবর্তীকালে তিনিও নবি হলেন। মৃত্যুর সময় কাবার দায়িত্বভার অর্পণ করে গেলেন আপন বংশধরের উপর । কালক্রমে তারা আল্লাহকে ভুলে গিয়ে মূর্তিপূজা শুরু করল। কাবাগৃহে তারা স্থাপন করল ৩৬০টি মূর্তি । হজের সময় ইব্রাহিম (আ.)-এর প্রথাগুলো পালিত হতো তবে তারা পূজা-অর্চনা করত প্রতিমার সামনে।

উত্তরাধিকার সূত্রে কুরাইশ বংশ তখনো কাবার রক্ষক এবং হজের তত্ত্বাবধায়ক ছিল। ফলে দেশ-বিদেশে ছিল তাদের যথেষ্ট সম্মান। এ বংশেই জন্মগ্রহণ করেন আমাদের প্রিয় নবি হযরত মুহাম্মদ (স.)। বাল্যকাল থেকে তিনি মূর্তিপূজাকে অপছন্দ করতেন। মক্কায় অতি অল্পসংখ্যক লোক তখনো মূর্তিপূজাকে ঘৃণা করতেন। তাঁদের বলা হতো হানিফ বা একনিষ্ঠ। তাঁরা মূর্তি পূজা না করে ইব্রাহিমি হজ পালন করতেন। মক্কা বিজয়ের পর নবি করিম (স.) পুনরায় ইব্রাহিমি হজ চালু করেন। 

কাজ : শিক্ষার্থীরা হজের ঐতিহাসিক পটভূমির উপর দলে বিভক্ত হয়ে আলোচনা করবে।

হজের তাৎপর্য
ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে হজ পঞ্চম। সারাবিশ্বের মুসলিম জাতির মহাসম্মেলন। বিশ্বের সকল মুসলিম যে এক উম্মত, হজ মৌসুমে মক্কায় এর বাস্তব প্রমাণ পাওয়া যায়। পৃথিবীর সকল দেশের মুসলমানগণ আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের আশায় নির্দিষ্ট দিনগুলোতে মক্কায় একত্র হয়। সম্মিলিতভাবে অনুষ্ঠান পালন করে। সকলের ধর্ম এক, উদ্দেশ্য এক, কর্মসূচিও এক। সকলের পরিধানে একই ধরনের সাদা পোশাক। ভাষা, বর্ণ, জীবন পদ্ধতির বিভিন্নতা সত্ত্বেও তারা সকলে একই ধ্বনি উচ্চারণে একাকার হয়ে যায়। সকলের হৃদয়ে এক আল্লাহর নাম। এতে পৃথিবীর সব দেশের লোকের পরস্পর মিলনের সুযোগ হয়। পরস্পরের মধ্যে ভাবের আদান প্রদান হয়। প্রয়োজনীয় সমস্যা সমাধানের সুযোগ হয় । এভাবে হজ সারাবিশ্বের মুসলমানকে সাম্য ও ভ্রাতৃত্ব বন্ধনে আবদ্ধ করে। প্রতি বছর হাজিদের হজে গমন ও প্রত্যাবর্তনের ফলে মুসলিম জাহানের প্রত্যেক অঞ্চলে মুসলমানের প্রাণে এক অভিনব আলোড়ন সৃষ্টি হয়। ইসলামের প্রাণচাঞ্চল্য পরিবেশ বজায় রাখার জন্য হজের যে এক বিরাট অবদান আছে এর মাধ্যমে তা বাস্তবে প্রতিফলিত হয়।

হজের ফজিলত
ইসলামে প্রত্যেকটি ইবাদতেরই যথেষ্ট গুরুত্ব ও ফজিলত রয়েছে। হজেরও অনেক গুরুত্ব ও ফজিলত রয়েছে। হজের গুরুত্ব সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন:

অর্থ : “যে ব্যক্তি বায়তুল্লাহ যিয়ারতে এসে কোনো অশ্লীল কাজ করল না, আল্লাহর অপছন্দনীয় কোনো কাজে লিপ্ত হলো না, সে গুনাহ বা পাপ থেকে এমনভাবে পবিত্র হয়ে ফিরল যেমন সে পবিত্র ছিল সেদিন, যেদিন সে তার মায়ের পেট থেকে জন্মগ্রহণ করেছিল ।” (বুখারি ও মুসলিম)

তিনি আরও বলেন, “তোমরা হজ ও উমরাহ পর পর করতে থাক। কারণ এ দুইটি ইবাদত দারিদ্র্য, অভাব এবং গুনাহগুলোকে এমনভাবে দূর করে দেয় যেমন আগুনের ভাটি লোহা, সোনা ও রুপার ময়লা দূরীভূত করে তা বিশুদ্ধ করে দেয়। হজে মাবরুরের (মাকবুল) প্রতিদান হচ্ছে একমাত্র জান্নাত” (নাসাঈ)। যে মুসলমানদের উপর হজ ফরজ তাদের উচিত খুশি মনে হজ পালন করা।

কাজ : শিক্ষার্থীরা দলে বিভক্ত হয়ে হজের ফজিলত ও তাৎপর্যের উপর আলোচনা করবে।
Content added || updated By

হজের ফরজসমূহ

হজের ফরজ তিনটি-
১.  হজের নিয়তে ইহ্রাম বাঁধা।
২. আরাফার ময়দানে ৯ই জিলহজ তারিখে অবস্থান (ওকৃষ্ণ) করা।
৩. তাওয়াফে যিয়ারত করা।

হজের ওয়াজিবসমূহ 

হজের ওয়াজিব কাজ সাতটি

১. আরাফার ময়দান হতে প্রত্যাবর্তনের সময় মুযদালিফায় অবস্থান করা।

২. সাফা ও মারওয়া পাহাড়দ্বয়ের মাঝখানে দৌড়ানো বা সাঈ করা । ৩. শয়তানকে (জামরাতুল আকাবায়) কংকর নিক্ষেপ করা।

8. তাওয়াফে বিদা অর্থাৎ মক্কার বাইরে থেকে আগত হাজিদের জন্য বিদায়কালীন তাওয়াফ করা । একে ৫. তাওয়াফুল বিদা (বিদায়ী তাওয়াফও) বলে। 

৫. মাথা মুড়ানো বা চুল ছাঁটা।

৬. কুরবানি করা।

৭. দম দেওয়া।

হজের সুন্নতসমূহ 

হজের অনেক সুন্নত রয়েছে । নিচে কয়েকটি সুন্নাত উল্লেখ করা হলো :

১. বহিরাগতদের জন্য তাওয়াফে কুদুম (আগমনী তাওয়াফ) করা।

২. হাজরে আসওয়াদ থেকে তাওয়াফ শুরু করা।

৩. জিলহজ মাসের ৭ তারিখে ইমামের মক্কায় হজ সম্পর্কে খুতবা প্রদান করা। ৯ তারিখে আরাফায় দ্বিপ্রহরের পর খুতবা প্রদান করা। একাদশ তারিখে মিনায় খুতবা দেওয়া।

৪. ৮ই জিলহজে মক্কা থেকে মিনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা করা, মিনায় উপস্থিত হয়ে যোহর থেকে ৯ই জিলহজের ফজর পর্যন্ত অবস্থান করে পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করা ।

৫. ৯ই জিলহজে সূর্য ওঠার পর মিনা থেকে আরাফার দিকে রওয়ানা করা।

৬. সম্ভব হলে আরাফাতে গোসল করা।

৭. ইহরাম বাঁধার আগে গোসল করা।

৮. মুয্দালিফায় রাত কাটানোর পর ফজরের নামায আদায় করে সূর্য উদয়ের পূর্বে মিনার দিকে রওয়ানা করা।

৯. জিলহজ মাসের ১১, ১২ তারিখে কংকর নিক্ষেপ (রামি) এর জন্য মিনাতে রাতযাপন করা।

১০. জিলহজ মাসের ১১, ১২ ও ১৩ তারিখে ক্রমধারা ঠিক রেখে কংকর নিক্ষেপ করা।

কাজ : শিক্ষার্থীরা হজের ফরজ, ওয়াজিব বা সুন্নাতগুলো পোস্টারে লিখে শ্রেণিতে উপস্থাপন করবে।
Content added || updated By

ইসলামের প্রতিটি কাজ নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে আদায় করতে হয়। হজ আদায়েরও নির্দিষ্ট পদ্ধতি আছে। নিম্নে হজ পালনের নিয়মাবলি ধারাবাহিকভাবে আলোচনা করা হলো :

ইহ্রাম : ইহরাম আরবি শব্দ। এর অর্থ নিষিদ্ধ। নামাযের উদ্দেশ্যে যেমন তাহরিমা বাঁধতে হয়, হজের জন্যও তেমনি ইহ্রাম বাঁধতে হয়। এটি হজের আনুষ্ঠানিক নিয়ত । শাওয়াল মাসের প্রথম তারিখ থেকে জিলহজ মাসের ৯ তারিখ পর্যন্ত যেকোনো দিন ইহরাম বাঁধা যায়। এ সময় ছাড়া অন্য সময় ইহরাম বাঁধলে হবে না। এ সময় ইরামের পোশাক পরবে ও কিবলামুখী হয়ে সরবে তালবিয়া পাঠ করবে । হজ মৌসুম ছাড়া অন্য সময় যদি কেউ কাবাঘর যিয়ারতের উদ্দেশ্যে মক্কা গমনের ইচ্ছা করে তবে তাকেও হজের ইহরাম বাঁধার স্থানে (মিকাতে) পৌঁছে ইহ্রাম বাঁধতে হবে।

তাওয়াফে কুদুম (আগমনি তাওয়াফ)
ইহ্রাম বাঁধার পর মক্কা পৌঁছে কাবাঘরের চারধারে তাওয়াফ করতে হয়। অর্থাৎ সাতবার ঘুরতে হয়। মক্কা শরিফ পৌছার পর এটি প্রথম তাওয়াফ। এ কারণে একে তাওয়াফে কুদুম বা আগমনি তাওয়াফ বলা হয়। হাজরে আসওয়াদ হতে তাওয়াফ শুরু করতে হয়।
ইহ্রাম বাঁধার পর মক্কা পৌঁছে কাবাঘরের চারধারে তাওয়াফ করতে হয়। অর্থাৎ সাতবার ঘুরতে হয়। মক্কা শরিফ পৌছার পর এটি প্রথম তাওয়াফ। এ কারণে একে তাওয়াফে কুদুম বা আগমনি তাওয়াফ বলা হয়। হাজরে আসওয়াদ হতে তাওয়াফ শুরু করতে হয়।

তাওয়াফে কুদুম (আগমনি তাওয়াফ)
ইহ্রাম বাঁধার পর মক্কা পৌঁছে কাবাঘরের চারধারে তাওয়াফ করতে হয়। অর্থাৎ সাতবার ঘুরতে হয় । মক্কা শরিফ পৌছার পর এটি প্রথম তাওয়াফ । এ কারণে একে তাওয়াফে কুদুম বা আগমনি তাওয়াফ বলা হয়। হাজরে আসওয়াদ হতে তাওয়াফ শুরু করতে হয়।

সাঈ : আগমনি তাওয়াফ শেষ করে কাবাঘরের অনতিদূরে অবস্থিত সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের মাঝের পথটি সাতবার অতিক্রম করতে হয়। একে বলা হয় সাঈ। সাফা পাহাড় থেকে সাঈ শুরু করে মারওয়া পাহাড়ে শেষ করতে হয়।

তারপর ইহরাম অবস্থায় জিলহজ মাসের সাত তারিখ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। এ সময়ের মধ্যে যতবার ইচ্ছা তাওয়াফ করা যায় এগুলো নফল তাওয়াফ। সাঈ করার প্রয়োজন নেই ৷ নফল তাওয়াফে অনেক সাওয়াব পাওয়া যায়।

৭ই জিলহজ
এ তারিখে যোহর নামাযের পর ইমাম খুত্বা দেন । এ খুত্বায় তিনি হজ সম্পর্কীয় জ্ঞাতব্য বিষয় বিশেষ করে ৮ তারিখ মিনায় এবং ৯ তারিখ আরাফাতে করণীয় বা আকাম সম্বন্ধে প্রয়োজনীয় নিয়ম-কানুন বর্ণনা করেন।

৮ই জিলহজ
এ তারিখে হাজিগণ সূর্যোদয়ের পর মিনায় আসেন । মিনায় যাওয়ার পূর্বে সুন্নাত অনুযায়ী গোসল করে ও ইহরামের চাদর পরে ‘মসজিদুল হারাম' বা বাইতুল্লাহ্ শরিফে আসেন। ইহরাম ও নিয়তের সাথে সাথেই তালবিয়া পাঠ করতে করতে মিনায় যেতে হয় । সেখানে পরের দিন পর্যন্ত পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করা সুন্নাত।

৯ই জিলহজ
নবম তারিখ আরাফার দিবস। এদিন সকালেই 'আরাফায় অবস্থানের' উদ্দেশ্যে মিনায় ফজরের নামায আদায় করে আরাফার ময়দানের দিকে রওয়ানা করতে হয়। এখানে ইমামের পেছনে যোহরের ওয়াক্তে যোহর ও আসর উভয় নামায একসঙ্গে আদায় করতে হয়। নামাযের পূর্বে ইমাম খুত্বা দেন । খুতবায় হজের বাকি বিধিবিধান বর্ণনা করেন। আরাফার ময়দানে অবস্থান হজের একটি ফরজ কাজ। ৯ তারিখ অথবা অনিবার্য কারণে ৯ তারিখের রাত পরবর্তী সুবহি সাদিকের পূর্বে কোনো সময়ে এক মুহুর্তের জন্য হলেও আরাফার মাঠে অবস্থান করতে হয় । অন্যথায় হজ হবে না। এদিন সূর্যাস্তের সাথে সাথে আরাফার মাঠ থেকে মুযদালিফায় ফিরে আসতে হয়। মুযদালিফায় পৌঁছে এশার নামাযের সময়ে মাগরিব ও এশা এক সঙ্গে আদায় করতে হয়। এ রাত মুযদালিফায় কাটাতে হয়।

১০ই জিলহজ
দশম দিন কুরবানির দিন। এদিন সকালে সূর্যোদয়ের পূর্বে হাজিগণ মিনার পথে রওয়ানা হয় । মিনার এক স্থানে শয়তানের প্রতিকৃতি হিসেবে পরপর তিনটি পাকা স্তম্ভ আছে । সেখানে পৌঁছে এদিন বড় শয়তানের প্রতিকৃতিকে লক্ষ্য করে সাতটি কংকর নিক্ষেপ করতে হয় । কংকরগুলো ছোলা পরিমাণ বড় হতে হয় । হযরত ইব্রাহিম (আ.) যখন আল্লাহর ইঙ্গিতে প্রাণপ্রিয় একমাত্র পুত্র ইসমাইল (আ.)-কে কুরবানি করতে যাচ্ছিলেন, তখন শয়তান পিতা-পুত্রের মনে সংশয়ের সৃষ্টি করে তাঁদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা চালিয়েছিল। তাঁরা বিরক্ত হয়ে শয়তানের প্রতি পাথর নিক্ষেপ করেছিলেন । আল্লাহর প্রতি তাঁদের ভালোবাসা ও নিষ্ঠার প্রতি সম্মান দেখিয়ে হাজিগণ এ পাথর নিক্ষেপ করে থাকেন।

কংকর নিক্ষেপের পর এ মিনাতেই কুরবানি করতে হয়। কুরবানির পর হাজিগণ মাথা কামিয়ে ইহ্রাম থেকে মুক্ত হন। চুল ছোট করলেও চলে, তবে সমস্ত মাথার চুল সমপরিমাপে কাটতে হয়। মেয়েদেরকে চুলের অগ্রভাগের কিছুটা কাটলেই চলে। তারপর ঐ তারিখেই অথবা ১১ কিংবা ১২ তারিখে মক্কা ফিরে কাবাঘর তাওয়াফ করতে হয় । এ তাওয়াফকে তাওয়াফে যিয়ারত বলা হয়। এটি হজের একটি ফরজ কাজ। মক্কায় প্রথম প্রবেশের সময় যদি সাফা ও মারওয়ায় সাঈ না করে থাকে তবে এ তাওয়াফের পর সাঈ করতে হয় । আগে করে থাকলে আর প্রয়োজন হয় না। তারপর মিনায় ফিরে যেতে হয় এবং সেখানেই ১১ ও ১২ তারিখ থাকতে হয়।

১১ ও ১২ তারিখ দুপুরের পর মিনার তিনটি স্তম্ভের প্রতিটিতে সাতটি করে কংকর মারতে হয় । তারপর ইচ্ছে করলে ১২ তারিখেই মক্কায় ফিরে আসতে পারেন । যদি কেউ মিনায় থেকে যান তবে তাঁকে ১৩ তারিখ দুপুরের পর তিনটি স্তম্ভে পাথর নিক্ষেপ করে মক্কায় ফিরতে হয়। এভাবে হজের কার্যাবলি সমাপ্ত করতে হয় । যারা বহিরাগত তাদের সর্বশেষ কাজ হচ্ছে বিদায়ী তাওয়াফ করা। একে ‘তাওয়াফুল বিদা' বা প্রত্যাবর্তনকালীন তাওয়াফও বলে । বহিরাগতদের জন্য এ তাওয়াফ ওয়াজিব।

হজের ত্রুটি ও তা সংশোধনের উপায়
হজ পালনকালে অনিচ্ছায়ও অনেক ত্রুটি-বিচ্যুতি বা নিয়মের ব্যতিক্রম ঘটতে পারে। এই ত্রুটির কোনোটি গুরুতর আবার কোনোটি সাধারণ পর্যায়ের হয়ে থাকে। হজের ওয়াজিব পালনে ধারাবাহিকতার ব্যতিক্রম ঘটলে ‘দম’ ওয়াজিব হয় । যেমন : মাথা মুণ্ডনের পূর্বে শয়তানকে কংকর নিক্ষেপ করা। আর 'দম' হচ্ছে একটি ছাগল, ভেড়া বা দুম্বা কুরবানি করা। উট, গরু বা মহিষের এক-সপ্তমাংশও এর স্থলাভিষিক্ত হতে পারে । সাধারণভাবে ইহরাম অবস্থায় নিষিদ্ধ কাজগুলো বা হারাম শরিফ এলাকায় নিষিদ্ধ কোনো কাজ করলে প্রতিকার স্বরূপ ‘দম’ বা কুরবানি করতে হয়। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে সাদাকা দিতে হয়।

কাজ : শিক্ষার্থীরা হজ পালনের ধারাবাহিক নিয়মগুলো সংক্ষিপ্ত শিরোনামে পোস্টারে লিখে শ্রেণিতে উপস্থাপন করবে।

সাম্য ও বিশ্বভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠায় হজের ভূমিকা
হজ একান্তই ব্যক্তিগত ইবাদত । আল্লাহর প্রেমিক হাজিগণ আল্লাহর নৈকট্য ও ভালোবাসা লাভের জন্য হজ করে থাকেন । তা সত্ত্বেও সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে এর যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে । বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে থাকা মুসলিম সম্প্রদায় হজের মৌসুমে বিশেষভাবে ধর্মীয় ও নৈতিক চেতনায় উদ্দীপ্ত হয়ে উঠে । যাঁরা হজে যান তাঁদের মন ধর্মীয় চেতনায় উদ্দীপ্ত থাকে, অনুরূপভাবে যাঁরা তাঁদের বিদায় সম্ভাষণ জানাতে আসে, তাঁদের মধ্যেও ধর্মীয় চেতনাশক্তি জাগ্রত হয়। হাজিগণ যে স্থান দিয়ে গমন করেন, তাঁদের 'লাব্বাইক' ধ্বনি শুনে সেখানকার অনেক মানুষের মনও হজের প্রতি আগ্রহী হয়।

বিভিন্ন দেশ হতে আগত হাজিদের শারীরিক অবকাঠামো, ভাষা ও সংস্কৃতি ভিন্ন কিন্তু মিকাতের (ইহরাম বাঁধার স্থান) কাছে এসে একই ধরনের কাপড় পরিধান করে। সবার মুখে একই ধ্বনি প্রতিধ্বনিত করে আকাশ বাতাস মুখরিত করে তোলে মক্কা ও মদিনায় একত্র হয়ে একই ইমামের পেছনে নামায আদায় করে। সমবেত মুসলিম জনতা ভাষা, জাতি, দেশ ও গোত্রের কৃত্রিম বৈষম্য ভেঙে দিয়ে বিশ্বভ্রাতৃত্ব স্থাপনের বিরাট সুযোগ পায় । মানুষের মনে সাম্যের ধারণা জন্মায় । হজের এই মহাসম্মেলনে পৃথিবীর সব শ্রেণির মানুষই এসে সমবেত হয় । সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের আদান-প্রদান ঘটে । ভাব বিনিময় হয়। বিশ্বশান্তি স্থাপনে এবং জাতিসমূহের পারস্পরিক দ্বন্দ্ব, কলহ মিটিয়ে ভালোবাসা, বন্ধুত্ব ও ভ্রাতৃত্ব স্থাপনের বিশেষ সুযোগ পায়। হজের এ শিক্ষা মানবসমাজে বাস্তবায়িত হলে, মানুষের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ, হানাহানি, মারামারি দূর হয়ে পরস্পরের মধ্যে ভালোবাসা, মমত্ববোধ ও সহনশীল দৃষ্টিভঙ্গি ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি সৃষ্টি হবে।

কাজ : ‘বিশ্বভ্রাতৃত্ব গড়ে উঠতে হজের সামাজিক শিক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।' শিক্ষার্থীরা দলে বিভক্ত হয়ে এ বিষয়ে বিতর্কের আয়োজন করবে । শিক্ষক মহোদয় বিচারকের ভূমিকা পালন করবেন।
Content added By

কুরবানির ধারণা
কুরবানির সমার্থক শব্দ 'উযহিয়্যাহ্’। এর আভিধানিক অর্থ ত্যাগ, উৎসর্গ ইত্যাদি । শরিয়তের পরিভাষায় জিলহজ মাসের ১০ তারিখ সকাল থেকে ১২ তারিখ সন্ধ্যা পর্যন্ত আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য যে পশু জবাই করা হয় তাকে কুরবানি বলে।

বর্তমানে যে কুরবানি প্রথা প্রচলিত আছে, তা হযরত ইব্রাহিম (আ.)-এর সময় থেকে চলে আসছে। এটি আত্মত্যাগ ও আল্লাহর নৈকট্য লাভের এক অন্যতম মাধ্যম। এটি একটি উত্তম ইবাদত। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন: “কুরবানির দিনে রক্ত প্রবাহিত করার চেয়ে প্রিয় কাজ আল্লাহর নিকট আর কিছুই নেই। ঐ ব্যক্তি কিয়ামতের দিন কুরবানির পশুর শিং, ক্ষুর ও লোমসমূহ নিয়ে হাজির হবে ৷ কুরবানির রক্ত মাটিতে পড়ার আগেই তা আল্লাহর নিকট বিশেষ মর্যাদার স্থানে পৌঁছে যায়। অতএব তোমরা কুরবানির দ্বারা নিজেদেরকে পবিত্র কর।” (তিরমিযি)

রাসুলুল্লাহ (স.) আরও বলেন : “সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যে কুরবানি করল না সে যেন আমাদের ঈদগাহের নিকটবর্তী না হয়।” (ইবনে মাজাহ)

                                                                                          কুরবানির পটভূমি

হযরত ইব্রাহিম (আ.)-কে আল্লাহ তায়ালা বহুবার বিভিন্নভাবে পরীক্ষা করেছেন। সকল পরীক্ষায় তিনি উত্তীর্ণ হয়েছেন। এবার তিনি এক অগ্নিপরীক্ষার সম্মুখীন হলেন। এক রাতে স্বপ্নে দেখলেন, পুত্র ইসমাইলকে কুরবানি করতে আল্লাহ তাঁকে আদেশ করেছেন। বৃদ্ধ বয়সের একমাত্র সন্তান ইসমাইল অপেক্ষা দুনিয়াতে অধিকতর প্রিয় আর কী হতে পারে? অনেক চিন্তা-ভাবনা করে তিনি শেষ সিদ্ধান্তে পৌঁছলেন, আল্লাহ যাতে খুশি হন তাই তিনি করবেন। পবিত্র কুরআনে উল্লেখ রয়েছে, তখন তিনি পুত্র ইসমাইলকে বললেন, “তিনি (ইব্রাহিম) বললেন : হে বৎস! আমি স্বপ্নে দেখেছি যে, তোমাকে আমি জবাই করছি । এখন তোমার অভিমত কী? তিনি (ইসমাইল) বললেন : হে আমার আব্বা ! আপনি যা আদিষ্ট হয়েছেন তা-ই করুন । আল্লাহ ইচ্ছা করলে আপনি আমাকে ধৈর্যশীলদের অন্তর্ভুক্ত পাবেন।” (সূরা আস্-সাফ্ফাত: ১০২)

ছেলের এ সাহসিকতাপূর্ণ উত্তর পেয়ে নবি ইব্রাহিম (আ.) খুশি হলেন। আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য তিনি পুত্র ইসমাইলের গলায় ছুরি চালালেন । এবারের পরীক্ষাতেও ইব্রাহিম (আ.) উত্তীর্ণ হলেন। পবিত্র কুরআনে আছে-

অর্থ: “তখন আমি তাকে আহ্বান করে বললাম: হে ইব্রাহিম! তুমি তো স্বপ্নাদেশ সত্যিই পালন করলে।” (সূরা আস্-সাফ্ফাত, আয়াত ১০৪-১০৫ )

আল্লাহ তায়ালা খুশি হয়ে বেহেশত থেকে একটি দুম্বা এনে ইসমাইলের জায়গায় ছুরির নিচে শুইয়ে দিলেন। হযরত ইসমাইল (আ.) এর পরিবর্তে দুম্বা কুরবানি হয়ে গেল। এ অপূর্ব ত্যাগের ঘটনাকে চিরস্মরণীয় করে রাখার জন্য তখন হতেই কুরবানি প্রথা চালু হয়েছে। এটি আজ মুসলিম সমাজে একটি পবিত্র ধর্মানুষ্ঠানরূপে স্বীকৃত।

 

কুরবানির নিয়মাবলি ও বিধিবিধান

কুরবানির কতিপয় বিশেষ নিয়মাবলি ও বিধিবিধান নিম্নে বর্ণনা করা হলো :

১. জিলহজ মাসের ১০ তারিখ ফজর হতে ১২ তারিখ সন্ধ্যা পর্যন্ত যদি কেউ নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পদের মালিক (সাহিবে নিসাব) হয়, তবে তার উপর কুরবানি ওয়াজিব । মুসাফিরের উপর কুরবানি ওয়াজিব নয়। 

২. জিলহজ মাসের ১০, ১১ এবং ১২ তারিখ তিন দিন কুরবানির সময়। এ তিন দিনের যেকোনো দিন কুরবানি করা যায়। তবে প্রথম দিন কুরবানি করা উত্তম।

৩. ঈদুল আযহার নামাযের আগে কুরবানি করা সঠিক নয় । নামায আদায়ের পর কুরবানি করতে হয়।

8. সুস্থ সবল ছাগল, ভেড়া, দুম্বা, গরু, মহিষ, উট ইত্যাদি গৃহপালিত পশু দ্বারা কুরবানি করতে হয় গরু, মহিষ এবং উটে এক হতে সাত জন পর্যন্ত শরিক হয়ে কুরবানি করা যায়।

৫. কুরবানির ছাগলের বয়স কমপক্ষে এক বছর হতে হবে। গরু ও মহিষ কমপক্ষে দুই বছরের হতে হবে । উটের বয়স কমপক্ষে পাঁচ বছর হতে হবে। দুম্বা ও ভেড়ার বয়স ছাগলের মতো। তবে ছয় মাসের বেশি বয়সের দুম্বার বাচ্চা যদি এরূপ মোটাতাজা হয় যে, এক বছরের অনেকগুলো দুম্বার মধ্যে ছেড়ে দিলে চেনা যায় না, তবে সেরূপ বাচ্চা দিয়ে কুরবানি জায়েয। কিন্তু ছাগলের বাচ্চার বয়স এক বছর না হলে কুরবানি জায়েয হবে না।

৬. কুরবানির গোশত সাধারণত তিন ভাগ করে এক ভাগ গরিব মিসকিনকে, একভাগ আত্মীয় স্বজনকে দিতে হয় এবং একভাগ নিজের জন্য রাখা উত্তম।

৭. নিজ হাতে কুরবানি করা উত্তম।

৮. কুরবানির প্রাণী দক্ষিণ দিকে মাথা রেখে কিবলামুখী করে, ধারালো অস্ত্র দ্বারা 'বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার' বলে জবাই করতে হয়।

প্রত্যেক মুসলমানের উচিত কুরবানির সময় একাগ্রতার সাথে উত্তম পশু কুরবানি করা। তাতে তাঁরা অনেক সাওয়াব পাবে। পরস্পরের মধ্যে আন্তরিকতা বাড়বে এবং হৃদ্যতাপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি হবে।

কাজ : শিক্ষার্থীরা দলে বিভক্ত হয়ে কুরবানির পটভূমি ও নিয়মাবলি আলোচনা করবে।
Content added || updated By

আকিকার ধারণা
‘আকিকা' আরবি শব্দ । এর অর্থ ভাঙা, কেটে ফেলা ইত্যাদি। ইসলামি পরিভাষায় সন্তান জন্মের পর সপ্তম দিনে তার কল্যাণ কামনা করে আল্লাহর নামে কোনো হালাল গৃহপালিত পশু জবাই করাকে আকিকা বলা হয়। আকিকা করা সুন্নাত। এর মাধ্যমে আল্লাহর রহমত পাওয়া যায়। সন্তানের বিপদাপদ দূর হয়। কাজেই প্রত্যেক পিতামাতার উচিত নবজাত সন্তানের নামে যথাসময়ে আকিকা করা। হাদিসে আছে, “প্রতিটি নবজাত সন্তান আকিকার সাথে সম্পৃক্ত। তার জন্মের সপ্তম দিনে তার নামে পশু জবাই করতে হবে। তার নাম রাখা হবে, তার মাথার চুল মুণ্ডন করা হবে।” (নাসায়ি)

নবি করিম (স.)-এর আগেও আকিকার প্রচলন ছিল। আল্লাহ তায়ালার অনুমতিতে তিনি তা চালু রাখেন। মহানবি (স.) নিজে আকিকা করেছেন, অন্যকে এ ব্যাপারে উৎসাহ দিয়েছেন। পিতামাতা আকিকা না করলে নিজের আকিকা নিজেও করা যায়। রাসুলুল্লাহ (স.) নবি হওয়ার পর নিজের আকিকা নিজেই করেছিলেন। আকিকা সন্তান জন্মের সপ্তম দিনে করা মুস্তাহাব। সপ্তম দিনে না পারলে ১৪, ২১ তারিখে অর্থাৎ প্রতি অতিরিক্ত সপ্তম দিনেও করা যায়। মাতাপিতার কাছে সবচেয়ে প্রিয় হলো সন্তান। সন্তান জন্মের সপ্তম দিনে চারটি কাজ করা উত্তম।

ক. সন্তানের ইসলামি নাম রাখা।
খ. মাথা মুণ্ডন করা।
গ. মাথার চুলের ওজন পরিমাণ সোনা বা রুপা দান করা।
ঘ. আকিকা করা।

আকিকা আদায়ের নিয়ম
মুসলমানের প্রত্যেকটি বৈধ কাজই ইবাদত । ইবাদত আদায়ের সুনির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে । আর নিয়মমতো কাজটি সমাধা করলে অবশ্যই আল্লাহর সন্তুষ্টি পাওয়া যায় । তাই আকিকা করাও একটি ইবাদত এবং তা আদায়ের সুনির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে। এ বিষয়ে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন : “ছেলে সন্তানের জন্য দুটি ছাগল ও মেয়ে সন্তানের জন্য একটি ছাগল জবাই করাই যথেষ্ট ।” (নাসায়ি)।
আকিকার জন্য ছেলে হলে দুটি আর মেয়ে হলে একটি ছাগল বা ভেড়া জবাই করতে হয় কিংবা কুরবানির গরুর মধ্যে ছেলের জন্য দুই আর মেয়ের জন্য এক অংশ নেওয়া যায়।

যে সকল পশু দ্বারা কুরবানি করা যায় ঐ সকল পশু দ্বারা আকিকাও চলে। আকিকার পশুর বয়স কুরবানির পশুর বয়সের অনুরূপ হতে হবে।

আকিকার পশুর গোশত কুরবানির পশুর গোশতের ন্যায় তিন ভাগ করে একই নিয়মে বণ্টন করতে হয়। এ গোশত সন্তানের পিতামাতা, ভাইবোন সকলেই খেতে পারে। এ গোশত রান্না করে আত্মীয় স্বজন ও গরিব মিসকিনকে খাওয়ানো যায়। চামড়া গরিব-মিসকিনকে দান করে দিতে হয়। আকিকার পশু সন্তানের পিতার নিজ হাতে জবাই করা উত্তম। নিজে অপারগ হলে অন্যের সাহায্যে জবাই করানো যায়।

কাজ : শিক্ষার্থীরা দলে বিভক্ত হয়ে আকিকা আদায়ের নিয়মাবলি নিয়ে আলোচনা করবে।
Content added || updated By

কুরবানি বলতে শুধু গরু, ছাগল, মহিষ, দুম্বা ইত্যাদি জবাই করা বোঝায় না। বরং এর দ্বারা আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জন বোঝায়। কুরবানি আল্লাহর নবি হযরত ইবরাহিম (আ.) ও হযরত ইসমাইল (আ.) এর অতুলনীয় ত্যাগের স্মৃতি বহন করে। এর মাধ্যমে মুসলমানগণ ঘোষণা করেন যে, তাদের কাছে নিজ জানমাল অপেক্ষা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের মূল্য অনেক বেশি। তারা পশুর গলায় ছুরি চালিয়ে এর রক্ত প্রবাহিত করে আল্লাহর কাছে শপথ করে বলে, “হে আল্লাহ! তোমার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য যেভাবে পশুর রক্ত প্রবাহিত করছি, প্রয়োজনে আমাদের শরীরের রক্ত প্রবাহিত করতেও কুণ্ঠিত হব না।” কে কত টাকা খরচ করে পশু ক্রয় করেছে, কার পশু কত মোটা তাজা, কত সুন্দর আল্লাহ তা দেখতে চান না। তিনি দেখতে চান কার অন্তরে কতটুকু আল্লাহর ভালোবাসা ও তাকওয়া আছে। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ বলেন :

অর্থ: “কখনো আল্লাহর নিকট পৌঁছায় না এগুলোর গোশত এবং রক্ত বরং পৌঁছায় তোমাদের তাকওয়া।” (সূরা আল-হাজ্জ, আয়াত ৩৭)

আত্মত্যাগ ও আত্মসমর্পণের মূর্ত প্রতীক ছিলেন হযরত ইব্রাহিম (আ.) ও হযরত ইসমাইল (আ.)। মানুষের জীবনে এ শিক্ষা গ্রহণ করলে তারা হয়ে উঠবে একে অপরের প্রতি সহানুভূতিশীল, পরোপকারী ও আত্মত্যাগী। আত্মত্যাগী মানুষই সমাজ ও রাষ্ট্রের কল্যাণ বয়ে আনতে পারে। নিজের সুখ শান্তির বাইরে যারা সমাজের মানুষের সুখকে বড় করে দেখে, তারাই প্রকৃত মানুষ। কুরবানির ত্যাগের শিক্ষা আমাদেরকে পরোপকারে উৎসাহিত করবে ও মানবতাবাদী চেতনার বিকাশ ঘটাবে।

কাজ : 'কুরবানির শিক্ষা মানুষকে আত্মত্যাগী ও পরোপকারী হতে সাহায্য করে। শিক্ষার্থীরা দলে বিভক্ত হয়ে এ বিষয়ে বিতর্কের আয়োজন করবে। শিক্ষক মহোদয় বিচারকের ভূমিকা পালন করবেন।
Content added || updated By